দেবাশীষ বড়–য়া রাজু, বোয়ালখালী :
সূর্য মেলায় যাবে দেবরাজ, মওলি চাই। মওলি দিতে ব্যতিব্যস্ত ঘরের বড়রাও। এ দৃশ্য
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ঘরে। দীপন চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর মাঘ মাসে
সূর্য পূজা উপলক্ষে বসা মেলায় যাওয়ার জন্য ছোটরা মওলি চাই। মেলা থেকে কিছু
কিনতে বাচ্ছারা আবদার করে বড়দের কাছে এ মওলি চাই ( মওলি আঞ্চলিক শব্দ)। মওলি
অর্থ উপহার স্বরূপ টাকা। বয়স্করা আবদার করে নাতি বা ছেলেদের কাছে মেলা থেকে
ফুলের ঝাড়–, কুলা-চালন, পোড়া আলু, তিলের সন্দেশ, জিলাপীসহ নানা পদের খাদ্য
সামগ্রীর।
যান্ত্রিক জীবনে এসবের প্রয়োজনীয়তা দিনদিন ফুরিয়ে আসলেও গ্রামীণ
ঐতিহ্য এসব সামগ্রী এখনো দেখামেলে বোয়ালখালী উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামের
সূর্যব্রত মেলায়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব সামগ্রীর পসরা নিয়ে
বিক্রেতাদের সমাগম হয়েছে মেলায়।
সূর্যপূজা উপলক্ষে মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের শেষ রবিবার (২৮ জানুয়ারি)
তিনদিনব্যাপী জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামের কানুর দিঘীর পাড়ে বসে প্রাচীনকাল থেকে
হয়ে আসা সূর্যব্রত মেলা। মেলার দ্বিতীয় দিনেও ছিল ক্রেতাদের সমাগম। মেলায়
ক্রেতার কমতি ছিলনা বলে জানান প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রেতা মো. আলমগীর।
গত রবিবার আশানুরূপ বিক্রি না হলেও শেষ দিন মঙ্গলবার এ মেলা আরো জমে উঠবে
বলে জানান মেলায় আসা ব্যবসায়ীরা।
মেলায় পোড়া আলু নিয়ে বসেছেন বৃদ্ধ পরিমল ও দেলোওয়ার। প্রতি কেজি আলু ১৬০
টাকা দরে বিক্রি করছে তারা। মেলায় আগত বয়স্করা এ আলু কিনতে ভীড় জমিয়েছে।
আলু না কিনে বাড়ি ফেরা যেন মেলায় আসায় নয়-এমনটি বললেন বৃদ্ধ সবিতা দত্ত।
একদিকে আলু কিনছেন তিনি, অন্যদিকে আচঁলের গিট খুলে নাতির বায়না
পূরণে খুচরো পয়সা দিচ্ছেন হাতে। মুখে তৃপ্তির হাসি।
মেলায় আগত প্রায় ক্রেতার হাতে ফুলের ঝাড়–, বাঁেশর তৈরি কুলা, চালন, লাই, লোহার
তৈরি দা, বটি, খন্তা, কোদাল, কুড়াল, কাঁসা পিতলের সামগ্রী নিয়ে ঘুরে
বেড়ানো দৃশ্যের দেখা মেলে। মেলার এক পাশে বসেছে নাগরদোলা। নাগরদোলায় চড়তে
ভীড় জমিয়েছে শিশু-কিশোররা।
মেলা ঘিরে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা বক্তাদের গদবাঁধা আলোচনা সভার
আয়োজন নেই, শুধু ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র দেখা-কেনাই বিনোদন । বসেছে চা,
ফুসকা, চটপটি, ঝাল বিতান, মুড়ি মুড়কি, চিনি গুড়ের তৈরি নানাপদের খাদ্যের
বিপনি বিতান। কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে গৃহস্থালী প্রায় জিনিস পাওয়া
যাচ্ছে এ মেলায়।
সূর্যব্রত পূজা ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিমাই দে বলেন, ঐতিহ্যবাহী
এ মেলা গৃহস্থালী জিনিসপত্রের চাহিদা পূরণ করে আসছে প্রাচীনকাল থেকে।
বছরের তিন দিন এ মেলাকে ঘিরে অত্র এলাকাসহ আশপাশের জেলা উপজেলা থেকে
মানুষজনের পদচারণায় মুখর মেলা অঙ্গন।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বোয়ালখালী শাখার সভাপতি শ্যামল বিশ্বাস বলেন, এ
ধরনের মেলা আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গ। এ সংস্কৃতিতে বাঁচিয়ে রাখতে হলে
গ্রাম বাংলার নিজস্ব জিনিসপত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ ধরনের মেলা
অসম্প্রদায়িক চেতনায় ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করে। এ ভ্রাতৃত্ববোধ টিকিয়ে
রাখতে নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালি সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে।